ঢাকা: আলোচিত পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটি বাতিল করে নতুন করে মামলা সাজানো হবে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে কবে নাগাদ মামলাটি হচ্ছে সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, দিন কয়েকের মধ্যেই মিতু হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেবে পুলিশ। ওই প্রতিবেদনে বাদী বাবুল আক্তারের অবস্থান সন্দেহজনক উল্লেখ করে তা ডিসমিসের আবেদন জানাবো হবে। এবং নতুন আরেকটি মামলা দয়ের করা হবে, যেখানে এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারীকে প্রধান আসামি করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিতু হত্যা মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বাংলামেইলকে বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তারের জড়িত থাকার সকল ধরনের প্রমাণ আমাদের হাতে আছে। কিন্তু কিছু ভুলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের পরও তাকে গ্রেপ্তার দেখানো সম্ভব হয়নি।’
তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (দক্ষিণ) জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার কামরুজ্জামান বাংলামেইলকে বলেন, ‘কবে নাগাদ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হতে পারে, সে বিষয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।’
এদিকে মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে কথা হলে মিতুর বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বাংলামেইলকে বলেন, ‘আজ পর্যন্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা আমার কাছে আসেনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘তবে আমি আশাবাদী অবশ্যই এই মামলায় প্রকৃত খুনিরা শনাক্ত হবে। কারণ মার্ডার কেস তদন্তের জন্য সবচেয়ে সহজ কেস, যদি তদন্ত কর্মকর্তা আন্তরিক হন।’
এদিকে গত ৫ জুন চট্টগ্রামে মিতু খুন হওয়ার পর থেকে বাবুল আক্তার খিলগাঁও মেরাদিয়ায় তার শ্বশুর বাড়িতে থাকছেন। সেখানে পুলিশ পাহারাও বসানো হয়েছিল। গত ২৪ জুন মাঝরাতে বাবুলকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া এবং পরদিন বিকেলে সেখান থেকে ফেরার একদিন পর শ্বশুরবাড়ি থেকে পুলিশ পাহারা তুলে নেয়া হয়।
তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এখন ওই বাড়ির সামনে সাদা পোশাকে পুলিশের নজরদারি রয়েছে।
বাবুল আক্তারকে যদি সন্দেহ না-ই করা হয় তাহলে এভাবে পুলিশ পাহারা বসানো কেন? এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল একাধিকবার গণমাধ্যমে বলেছেন, বাবুলকে নজরদারিতে রাখার কোনো প্রশ্নই আসে না। এছাড়া তাকে সন্দেহ করার মতো কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি। তার নিরাপত্তার জন্যই পুলিশ পাহারা বসানো হয়েছে।
এদিকে স্ত্রী খুন হওয়ার আগের দিনই পদোন্নতি পেয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা সদরদপ্তরে যোগ দিতে আসেন বাবুল আক্তার। স্ত্রী হত্যার দিনও তিনি ঢাকাতেই ছিলেন। ওই ঘটনার পর শ্বশুরবাড়ি থেকে নিয়মিত অফিসে গিয়ে হাজিরা দিয়ে আসতেন। কিন্তু ডিবি কার্যালয় থেকে ফেরার পর আর একদিনও যাননি। এছাড়া ডিবি থেকে ফেরার পর গোসল করেই দরজা বন্ধ করে দেন তিনি। পরদিন বিকেলের আগে আর দরজা খোলেননি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সেই সময় পরিবারের লোকজন বলেছিলেন, তিনি মানসিকভাবে ‘আপসেট’ আছেন।
এ কারণে ধারণা করা হচ্ছে বাবুল আক্তার আর বাহিনিতে ফিরছেন না। কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে এমন খবরও প্রকাশ পেয়েছে, ডিবি কার্যালয়ে নেয়ার পর বাবুলকে দুটি অপশন দেয়া হয়: স্ত্রী হত্যার খুনের দায় স্বীকার করে কারাবাস অথবা চাকরি থেকে ইস্তফা। বাবুল দ্বিতীয়টিই বেছে নিয়েছেন।
মিতু হত্যা নিয়ে প্রশাসন ও গোয়েন্দাদের নানা সূত্রে এমন অনেক খবরও বেরিয়েছে যেগুলোতে স্ত্রী হত্যার অভিযোগের তীর বাবুল আক্তারের দিকে ছোড়া হচ্ছে।
তবে এমনও শোনা যাচ্ছে, বাবুল আক্তারকে নিয়ে পুলিশ প্রশাসনে দুটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। একটি অংশ তাকে স্ত্রী হত্যায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছে, অপর অংশটি তাকে বাঁচানোর চেষ্টায় তৎপর।
এ ঘটনায় ইতিমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে খুনে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণকারী মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম এবং আনোয়ার হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অপর দু’জন এহতেশামুল হক ভোলা ও মনির। এই ভোলা অস্ত্র সরবরাহকারী বলে জানিয়েছে ওয়াসিম ও আনোয়ার। এছাড়া কিলিং মিশনের নেতৃত্বাদানকারী জনৈক পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সোর্স পরিচয়দানকারী আবু মুছার নাম এসেছে। তবে গত ২৮ জুন ভোলা ও মুনিরকে গ্রেপ্তার দেখানো হলেও তারা অনেক আগেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বলে তদন্ত সূত্রে জানা যায়। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- রাশেদ, নবী, কালু ও শাহজাহান।
এতোকিছু জানা গেলেও এই খুনের নেপথ্যে মূল হোতা কে সে বিষয়ে কোনা তথ্য মিলেনি। পুলিশের অনেক অস্পষ্টতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। অনেকে অভিযোগ করছেন, পুলিশ এ ব্যাপারে সন্দেহজনকভাবে রাখঢাক করছে।
উল্লেখ্য, গত ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি’র মোড় এলাকায় ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত ও গুলিতে খুন হন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনার পরদিন পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে গোয়েন্দা পুলিশ, র্যাব, সিআইডি, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিআই)। তবে মামলার মূল তদন্তে আছে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। যদিও সবগুলো সংস্থা মিলে এখন পর্যন্ত এ ঘটনার তেমন কোনো ক্লু খুঁজে বের করতে পারেনি।
বাংলামেইল
পাঠকের মতামত